নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে নারীরা পিতৃতন্ত্রের অবসান ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরব হয়েছিলেন। ২৭শে জানুয়ারি ২০২৪ তপন থিয়েটারের মঞ্চে ‘আমরাও পারি’ বলে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরলেন আজকের নারীরা।

দক্ষিণ কলকাতার নাট্যদল মিউনাস ২০০৭ সাল থেকে ২৪ ঘন্টার নাট্য উৎসব করে আসছে। মাঝে কয়েক বছর অবশ্য বন্ধ ছিল। এ বছর মিউনাসের কর্ণধার উৎসব দাস এক অভিনব নাট্য উৎসবের আয়োজন করলেন। মহিলা নির্দেশকদের নির্দেশনায় টানা ২৪ ঘন্টা ধরে ২৫ টি নাটক নিয়ে নাট্য উৎসব। ২৪ ঘন্টার নাট্য উৎসব চললো প্রায় ২৮ ঘন্টা ধরে।

২৫ টি নাট্য দলের মহিলা নির্দেশকের হাতে ২৫ টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে নাট্য উৎসবের শুভ সূচনা হয়। দেশের কনিষ্ঠতম মহিলা নির্দেশক ভূমিসুতা দাসের নির্দেশনায় নকসার ‘ইয়েস’ নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে দিয়ে এই নাট্য উৎসবের শুভ সূচনা হয়।
এরপর একে একে মঞ্চস্থ হয় চন্দ্রা কোলে বিশ্বাসের নির্দেশনায় ‘অপেক্ষা’, সঞ্চয়িতা বসুর নির্দেশনায় ‘অঙ্গদার সাথে দেখা হয়েছিল’, রীনা ভারতীর নির্দেশনায় ‘দ্রোহ’, বেবী সেনের নির্দেশনায় ‘বৈমাত্রেয়’, জবা শর্মার নির্দেশনায় ‘দ্বিতীয় আমি’, অলোক পর্না গুহর নির্দেশনায় ‘যাঃ সব ভণ্ডুল’, লোপামুদ্রা গুহ নিয়োগীর নির্দেশনায় ‘ছিনিয়ে খায়নি কেন?’, সুমনা চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ‘সাফোকেশন’, শুভ্রা রায়ের নির্দেশনায় ‘একটু আগুন দে’, পদ্মা সরকারের নির্দেশনায় ‘এবার ভোর’, সোমা গোস্বামীর নির্দেশনায় ‘রান শিউলি রান’, সঞ্জিতার নির্দেশনায় ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’, রাজশ্রীর নির্দেশনায় ‘রক্তের টান’, সন্ধিতা চ্যাটার্জির নির্দেশনায় ‘শিবের অসাধ্যি’, তুহিনা বসু সেনের নির্দেশনায় ‘সুপ্রভাত’, হানুফা বানুর নির্দেশনায় ‘হাইফেন’, স্বাতী রায়ের নির্দেশনায় ‘শ্রী নটী’, রমা বিশ্বাসের নির্দেশনায় ‘নেকী’, রূপা সুরের নির্দেশনায় ‘চোর চরণদাস’, সুচরিতা বড়ুয়া চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘মৃত্যুদেশ’, শামীমা আক্তার মুক্তার নির্দেশনায় ‘পুতুলটিকে দেখে রেখো’, কল্পনা বরুয়ার নির্দেশনায় ‘মারি ফারার ও আমরা’, ও কাবেরী বসুর নির্দেশনায় ‘স্ত্রীর পত্রের মুখোমুখি’। রত্না ধরের নির্দেশনায় মিউনাসের ‘কলকাতার কপালকুণ্ডলা’ মঞ্চায়নের মধ্যদিয় নাট্য উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
নাট্যকাররা চিরকালই বঞ্চিতের দলে! পর্দার আড়ালেই থেকে যান। প্রকাশ্যে কমই আসে তাঁদের নাম, একমাত্র ওজনদার নাট্যকার ছাড়া। অথচ তাঁরাই কিন্তু নাটকের প্রথম রূপকার। তাই এই নাট্য উৎসবে মঞ্চস্থ সমস্ত নাটকের নাট্যকারদেরও সন্মান জানান হয় মিউনাসের পক্ষ থেকে। উৎসবের দিন ২৭ জানুয়ারি, দুপুর ২.৩০ টায় অনুষ্ঠিত হয় নাট্যকারদের নিয়ে জমাটি আড্ডা। চলে মতবিনিময়, আলোচনা নিজেদের মধ্যেই।

প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্র বলেন ‘নাটকের মূল চরিত্রে নারীরাই চিরকাল অভিনয় করেছেন, তবে তাঁরা নির্দেশকের ভূমিকায় থাকবেন না কেন? নির্দেশনায় শুধু পুরুষদের অধিপত্য থাকবে কেন?’ এই ‘কেন’-র জবাব বোধহয় মঞ্চেই প্রতিফলিত হলো। তরুণ প্রজন্মের নির্দেশক ও অভিনেতা অধিকারী কৌশিক বলেন ‘ উৎসব দা’র নেতৃত্বে মিউনাস ২০০৭ সাল থেকে ২৪ ঘণ্টার নাট্য উৎসব করে আসছে। এ বছর মিউনাস সকল মহিলা নির্দেশকদের নিয়ে ২৪ ঘণ্টার নাট্য উৎসব করলো, তাদের এই উৎসব প্রশংসার দাবি রাখে।’
মিউনাস নাট্যদলের কর্ণধার উৎসব দাসের কথায়, এই নাট্য উৎসব ঠিক আর পাঁচটা নাট্য উৎসবের মতো নয়। নাট্যদলগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ভাবনা থেকেই এই নাট্য উৎসবের পরিকল্পনা। অন্তত একটা পুরো দিন যাতে আমরা থিয়েটারের সঙ্গে কাটাতে পারি। ৩৬৫ দিনের মধ্যে একদিন আমরা থিয়েটারকে ঘুমোতে দেব না, থিয়েটারের সঙ্গে জাগব নাট্যশিল্পীরাও। নাট্যমোদীদের এই উৎসবে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই আমাদের পরম পাওনা।