নিজস্ব প্রতিনিধি: গত ১৫ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হাওড়া রামরাজাতলায় নানামুখ প্রান্তরে কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যারে’র আয়ােজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘৭ম জাতীয় নাট্যোৎসব হাওড়া – ২০২০’। কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যারে’র ৫টি সহ দিল্লী, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের মোট ১২ টি প্রযোজনা মঞ্চায়ন হয় এই নাট্যোৎসবে।
১৫ ডিসেম্বর, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে নাট্যোৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন অভিনেতা ও নির্দেশক শ্ৰী জিন্না আহমেদ। এছাড়াও ছিলেন অভিনেতা শুভাশিষ ভট্টাচার্য, অভিনেতা শৈবাল দাস ও কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যারে’র সভাপতি কৃষ্ণমােহন মজুমদার। নটদেবতার স্তুতি বন্দনার পরে প্রকাশিত হয় কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যারে’র বার্ষিক মুখপত্র ‘কথক কথা’ এবং কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যার এর নবতম উদ্যোগ, জেলা ভিত্তিক নাট্যদলের ইতিহাস সম্পর্কিত গ্রন্থ ‘গ্রন্থনে নাট্যকথা’।

এরপর মঞ্চায়িত হয় কে. পি. আর. প্রযােজিত কৃতি মজুমদার নির্দেশিত নাটক ‘জোয়ার’ এবং নহলী প্রযােজিত শৈবাল দাস নির্দেশিত নাটক ‘কাক-কথা’।
১৬ ডিসেম্বর, সকাল ১০টায় নাগাদ আমার ‘প্রতিবাদের ভাষা’ শিরোনামে এক আলােচনা সভায় বক্তা হিসাবে ছিলেন জিন্না আহমেদ, অতনু সরকার ও উৎপল ফৌজদার। এদিন মঞ্চস্থ হয় ৪ টি প্রযোজনা। মঞ্চস্থ হয় প্রগতি গ্রুপ থিয়েটার প্রযােজিত আবীর ঘােষ নির্দেশিত নাটক ‘চেনা-অচেনা’, থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টরী প্রযােজিত সৌরভ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত নাটক ‘অরূপকথা’, বাউরিয়া পিপলস রেপার্টরী থিয়েটার প্রযােজিত উৎপল ফৌজদার নির্দেশিত ‘যদুনাথ এর আত্মকথন’ ও অরণি প্রযােজিত প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী নির্দেশিত নাটক ‘ভারতবর্ষ’।

১৭ ডিসেম্বর, সকাল ১০টায় নাগাদ আমার ‘প্রতিবাদের ভাষা’ শিরোনামে এক আলােচনা সভায় বক্তা হিসাবে ছিলেন সজল মন্ডল, তরুনাভ সাঁতরা ও রাকেশ ঘােষ।এদিন সকালে আলােচনা সভা শুরু হয় ‘রূপ’ ও ‘মেঘা’-র গান দিয়ে। এদিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যার প্রযোজিত ঝুমা দাসগুপ্তের একক অভিনয়ে নাটক ‘হালখাতা’ ও দ্বিতীয় নাটকটি ছিল ‘কর্ণ’। দুটি নাটকের নির্দেশক ছিলেন কৃতি মজুমদার। এছাড়াও ছিল ডঃ কৃষ্ণমােহন মজুমদারের একক বাঁশী, সৃষ্টি ভট্টাচার্যের একক বেহালাবাদন ও কথকদের নৃত্যানুষ্ঠান।
১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সগ্নিক বাসুরী’র সঙ্গীত পরিবেশনের পর মঞ্চস্থ হয় চারটি নাটক। সায়মে’র নির্দেশনায় ইফটা’র ‘একা – মর্ডান লােনলীনেস’, সুশান্ত পালে’র নির্দেশনায় সপ্তনটে’র ‘বন্দী’, রাজর্ষি চক্রবর্তী’র নির্দেশনায় অঙ্গনা কমিউনিটি থিয়েটারে’র ‘হারিয়ে গ্যাছে মা’ এবং অর্ক মুখােপাধ্যায়ে’র নির্দেশনায় তৃষা’র ‘বৃত্তের বাইরে’।এছাড়াও এই সন্ধ্যায় প্রশান্ত ভট্টাচার্যের আবৃত্তি দর্শকের মন কাড়ে।

১৯ ডিসেম্বর, জাতীয় নাট্যোৎসবের পঞ্চম তথা শেষ দিন সকাল ১০.৩০ এ মঞ্চস্থ হয় মৌমিতা ঘুঘু’র নির্দেশনায় কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যারে’র প্রযােজনা ‘প্ৰবাহিণী কাদম্বিনী’। এরপর ‘প্রতিবাদের ভাষা’ শিরোনামে এক আলােচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজয় মুখােপাধ্যায়, অনীশ ঘােষ, স্বাতী রায়, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, বহ্নি চক্রবর্তী, সােমা ইন্দু দে, সােমা দাস, সুমনা চক্রবর্তী ,ন্যান্সী, মৌমিতা সাহা, দূতিলেখা মুখার্জী ও উপাবেলা পাল। এদিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যার প্রযােজিত সুমিত শ্রেষ্ঠা নির্দেশিত ‘অলক্ষে যাঁরা’, একটি প্রযােজনা প্রযােজিত তপন দাস নির্দেশিক ‘এক চিলতে রােদুর’, দিল্লী হরিজন থিয়েটার প্রযােজিত প্রতীক সিং নির্দেশিত নাটক ‘পল গােমরা কা স্কুটার’ এবং উড়িষ্যা নাট্যচেতনা প্রযােজিত সুবােধ পট্টনায়ক নির্দেশিত নাটক ‘আমাে ঘরাে’।
এই করােনাকালীন পরিস্থিতির পরও যাতে এলাকাবাসী নাটকের প্রতি আকর্ষন না হারায় এবং দর্শককে থিয়েটার অভিমুখে প্রেরিত করার ছিল এই নাট্যোৎসবের উদ্দেশ। এবং এটাও বাস্তব যে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দর্শকদের উপস্থিতি নজর কারে। সীমিত আসন পূর্ণ হওয়ার পরও অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাটক দেখেন। নানামুখ প্রান্তরে প্রতি মাসের ১৫ তারিখ নিয়মিত নাট্যচর্চার আসর আয়ােজন করার অঙ্গীকারবদ্ধ হয় কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যার।