ক্যানভাস নিউজ
Image default
অন্যান্য

পদ্ম পুরস্কারে বাঙালিদের দাপট

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১১ জন পাচ্ছেন পদ্ম পুরস্কার।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার রাতে এবছরের পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করল কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১১ জন এবারের পদ্ম পুরস্কার পাচ্ছেন। শিল্প থেকে বিজ্ঞান, সমাজ সেবা সহ বিভিন্ন কাজের জন্য তাঁরা এই পুরস্কার পাচ্ছেন।
পদ্মশ্রী পাচ্ছেন ৮ জন ও পদ্মভূষণ পাচ্ছেন ৩ জন।

  • মরণোত্তর পদ্মশ্রী সম্মান পাচ্ছেন ছৌ নৃত্যের জন্য মুখোশ তৈরির কারিগর নেপালচন্দ্র সূত্রধর। তিন প্রজন্ম ধরে ছৌ নৃত্যের মুখোশ তৈরি করে এই সূত্রধরেরা। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের কাজের সূত্রে পরিচিত পেয়েছিলেন নেপালচন্দ্র। ২০২৩ সালে তাঁর প্রয়াণ হয়।
  • ৭৮ বছর বয়সে পদ্মশ্রী সম্মান পাচ্ছেন বাংলার দুখু মাঝি (গাছ দাদু)। পুরুলিয়ার সিন্দ্রি গ্রামের বাসিন্দা দুখু মাঝি প্রায় পাঁচ হাজার গাছ রোপন করেছেন। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই যেন তাঁর জীবনের নেশা।
  • ৮৮ বছরের ভাদু শিল্পী রতন কাহারকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হল। ‘বড়লোকের বিটি লো’ গান খ্যাত এই শিল্পী টুসু, ঝুমুর, ভাদু লোকগীতির জন্য পরিচিত লাভ করেছেন।
  • বাংলা থেকে পদ্মশ্রী সম্মান পাচ্ছেন ৬৮ বছর বয়সী কলকাতার কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্র পাল। সাবেকি দুর্গা প্রতিমা গড়ায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। UNESCO থেকেও সম্মানিত হয়েছেন এই শিল্পী।
কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্র পাল
  • বাংলা থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের পদ্মশ্রী পাচ্ছেন একলব্য শর্মা এবং নারায়ণ চক্রবর্তী। শিল্পে পদ্মশ্রী প্রাপকের নাম তাকদিরা বেগম এবং গীতা রায় বর্মণ।
  • বলাবাহুল্য বাংলাদেশের খ্যাতনামা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও এবছর পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হচ্ছেন।
  • পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, রাজনীতিবিদ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (মরণোত্তর), ও সংগীতশিল্পী ঊষা উত্থুপ।

এবারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা ৩৪ জন ব্যক্তিত্বকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করা হচ্ছে। তালিকায় কে কে রয়েছেন দেখে নেওয়া যাক একনজরে-
১) পার্বতী বড়ুয়া- অসমের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সি পার্বতী বড়ুয়া দেশের প্রথম মহিলা মাহুত। প্রাণী কল্যাণে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে।
২) জাগেশ্বর যাদব- ছত্তিশগঢ়ের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সি জাগেশ্বর যাদব উপজাতিদের কল্যাণে তাঁর জীবন নিয়োজিত করেছিলেন।
৩) চামি মুর্মু- ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সি চার্মি পরিবেশ রক্ষায় এবং মহিলাদের স্বনির্ভরতার লক্ষে বিশেষ কাজ করেছেন।
৪) গুরবিন্দর সিং- হরিয়ানার বাসিন্দা ৫৩ বছর বয়সি গুরবিন্দর বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন, অনাথ, গৃহহীনদের জন্য বিশেষ কাজ করেছেন।
৫) সত্য নারায়ণ বালেরি- কেরলের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সি সত্যনারায়ণ কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
৬) দুখু মাঝি- পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ৭৮ বছর বয়সি দুখু মাঝি পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি গাছ দাদু হিসাবে পরিচিত।
৭) কে চেল্লামাল- আন্দামান ও নিকোবরের বাসিন্দা ৬৯ বছর বয়সি চেল্লামাল অর্গানিক কৃষিকাজে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
৮) সংগাথাঙ্কিমা- মিজোরামের বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সি এই ব্যক্তি অনাথ শিশুদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। মিজোরামে বৃহত্তম অনাথ আশ্রম চালান তিনি।
৯) হেম চন্দ্র মাঝি- ছত্তিশগঢ়ের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সি হেমচন্দ্র ৫ দশকের বেশি সময় ধরে দরিদ্র গ্রামবাসীর চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্য পরিষেবায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
১০) ইয়ানুং জামোহ লেগো- অরুণাচল প্রদেশের ৫৮ বছর বয়সি এই ব্যক্তি কৃষিকাজে বিশেষ অবদানের জন্য পদ্ম পুরস্কার পাচ্ছেন।

পুরুলিয়ার দুখু মাঝি (গাছ দাদু)


১১) সোমান্না- কর্ণাটকের বাসিন্দা ৬৬ বছর বয়সি সোমান্না ৪ দশক ধরে উপজাতিদের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন।
১২) সর্বেশ্বর বসুমেটারী- অসমের বাসিন্দা ৬১ বছর বয়সি এই ব্যক্তি কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
১৩) প্রেমা ধনরাজ- পেশায় চিকিৎসক কর্নাটকের বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সি ধনরাজ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে প্লাস্টিকের পুনর্নবীকরণ এবং প্লাস্টিকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারে বিশেষ কাজ করেছেন।
১৪) উদয় বিশ্বনাথ দেশ পান্ডে- মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সি এই ব্যক্তি ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
১৫) ইয়াজকি মনকশ ইতালিয়াজ- গুজরাটের বাসিন্দা ৭২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি প্রখ্যাত মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং অ্যানিমিয়া রোগের জনসচেতনা প্রসারে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
১৬) শান্তি দেবী পাসওয়ান এবং শিবান পাসোয়ান- বিহারের মধুবনির বাসিন্দা এই দম্পতি চিত্রকলায় দেশ-বিদেশ থেকে বহু পুরস্কার পেয়েছেন এবং ২০ হাজারের বেশি মহিলাকে প্রশিক্ষিত করেছেন।
১৭) রতন কাহার- পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ৮৮ বছর বয়সি এই ব্যক্তি প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী।
১৮) অশোক কুমার বিশ্বাস- বিহারের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সি এই ব্যক্তি চিত্রকলায় বিশেষ জনপ্রিয়।
১৯) বালাকৃষ্ণ সদানম পুঠিয়া ভিথিল- কেরলের কথাকলি শিল্পী ৭৯ বছর বয়সি বিশ্বের দরবারেও ভারতের এই সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন।
২০) উমা মহেশ্বরী ডি- অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সি উমা মহেশ্বরী কলাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

ছৌ নৃত্যের জন্য মুখোশ তৈরির কারিগর নেপালচন্দ্র সূত্রধর


২১) গোপীনাথ সোয়াইন- ওড়িশার বাসিন্দা ১০৫ বছর বিশিষ্ট ভজনশিল্পী।
২২) স্মৃতি রেখা চাখমা- ত্রিপুরার বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সি স্মৃতিরেখা বস্ত্রশিল্পে অভিনবত্ব এনেছিলেন।
২৩) ওম প্রকাশ শর্মা- মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা ৮৫ বছর বয়সি ওম প্রকাশ নাট্যজগতে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
২৪) নারায়ণ ইপি- কেরলের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সি নারায়ণ ইপি ৭ দশক ধরে ট্রাডিশনাল নৃত্য তুলে ধরেছেন।
২৫) ভাগবত প্রধান- ওড়িশার বাসিন্দা ৮৫ বছর বয়সি ভাগবত প্রধান নাচে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
২৬)সনাতন রুদ্র পাল- পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট ভাস্কর হলেন ৬৮ বছর বয়সি এই ব্যক্তি।
২৭) বদরাপ্পান এম- তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ৮৭ বছর বয়সি এই ব্যক্তির নৃত্যশিল্পে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
২৮) জর্ডান লেপচা- সিকিমের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সি এই ব্যক্তি হস্তশিল্পে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
২৯) মচিহান সাসা- মণিপুরের মৃৎশিল্পী হিসাবে বিশেষ জনপ্রিয় ৭৩ বছর বয়সি মাচিহান।
৩০)গদ্দাম সামাইয়া- তেলঙ্গনার বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সি এই ব্যক্তি নৃত্যক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।
৩১) জানকী লাল- রাজস্থানের বাসিন্দা ৮১ বছর বয়সি জানকী লালা নাট্যজগতে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
৩২) দাসারি কোন্ডপ্পা- তেলঙ্গনার বাসিন্দা ৬৩ বছর বয়সি দাসারি বিশিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী।
৩৩)বাবুরাম যাদব- উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সি বাবুরাম জনপ্রিয় হস্তশিল্পী।
৩৪) নেপাল চন্দ্র সূত্রধর- পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ৮২ বছর বয়সি নেপাল চন্দ্র বিশিষ্ট মুখোশ শিল্পী।

ভাদু শিল্পী রতন কাহার


কেন্দ্র পদ্মপ্রাপকদের নামের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে ৫ জন পদ্মবিভূষণ, ১৭ জন পদ্মভূষণ পাচ্ছেন।
পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, অভিনেতা চিরঞ্জীবী এবং বৈজয়ন্তীমালাকে। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন বিন্দেশ্বর পাঠক এবং পদ্মা সুব্রহ্মণ্যম। বিন্দেশ্বর পাঠক মরণোত্তর সম্মান পাচ্ছেন। আবার পাবলিক টয়লেট ব্যবস্থায় বিপ্লব আনার জন্য বিখ্যাত সুলভ পাঠকও এই সম্মান পাচ্ছেন।
অন্যদিকে, ১৭ জন পদ্মভূষণ প্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, রাজনীতিবিদ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় (মরণোত্তর), সংগীতশিল্পী ঊষা উত্থুপ।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য ভারত সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্ম পুরস্কার শুরু করেছিল। ১৯৫৫ থেকে এই পুরস্কার তিনটি বিভাগে দেওয়া হয়- পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

Related posts

কলকাতায় অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যু

ক্যানভাস নিউজ

আজ ৯জানুয়ারি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে কোন প্রেক্ষাগৃহে কি?

ক্যানভাস নিউজ

প্রয়াত বাংলা সিনেমার ‘মছলিবাবা’ মনু মুখোপাধ্যায়

ক্যানভাস নিউজ