নিজস্ব প্রতিনিধি: অগ্ন্যাশয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চেন্নাই ও ঢাকার হাসপাতালে দুই সপ্তাহের চিকিৎসার শেষে প্রয়াত হলেন মঞ্চ,টেলিভিশন, রেডিও নাটকের অভিনেতা আব্দুল কাদের। বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। দীর্ঘদিন মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগেছেন আব্দুল কাদের। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাইতে যান তিনি। সেখানকার হাসপাতালেই ১৫ ডিসেম্বর ক্যানসার ধরা পড়ে কাদেরের। জানা যায়, ক্যানসার সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে পৌঁছে গেছে। ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তখন তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া যায়নি। ফলে ২০ ডিসেম্বর আবদুল কাদেরকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফিরেই তাঁকে ভর্তি করা হয় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। আজ ২৬ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ৮.২০তে সেখানেই প্রয়াত হন তিনি।

অভিনেতা আব্দুল কাদের ১৯৫১ সালে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুল কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় জীবন শুরুহয়। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তাঁর। টেলিভিশনে আব্দুল কাদের অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’। আব্দুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদের সহসভাপতি ছিলেন।
মঞ্চ নাটকে প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন তিনি। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ টেলিভিশন নাটকে ’বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল আলোচনায় আসেন। হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ছোট পর্দায় তিনি তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ ইত্যাদি। টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন কাদের। তাঁর উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন
নাটক গুলি হল ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘দুলাভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকআপ’, ‘ঢুলি বাড়ি’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’ ইত্যাদি।
২০০৪ সালে আব্দুল কাদের অভিনয় করেন ‘রং নাম্বার’ চলচ্চিত্রে।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে টেনাশিনাস পদক, মহানগরী সাংস্কৃতিক ফোরাম পদক, অগ্রগামী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক, জাদুকর পিসি সরকার পদক, টেলিভিশন দর্শক ফোরাম অ্যাওয়ার্ড, মহানগরী অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু পদকও পেয়েছেন তিনি।
তাঁর প্রয়াণে শোকাহত শিল্পীমহল। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক ভাবে আব্দুল কাদেরের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, পথনাটক পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, সুবচন নাট্য সংসদ, সময় নাট্যদল ও ঢাকা থিয়েটার।