অধিকারী কৌশিকঃ সম্প্রতি কেন্দ্র সংস্কৃতি মন্ত্রক নাট্য দলগুলোকে তিনটি বিষয়ের ওপর ২০ মিনিটের একটি ছোট্ট নাটিকা পারফর্ম করার নির্দেশ দিয়েছেন।কি সেই বিষয়–বসুধৈব কুটুম্বকম,বিকশিত ভারত,পঞ্চ ভারত।কোলকাতার কিছু নক্সাল ও মাওবাদী নাট্যব্যাক্তিত্ব তাতে বেজায় চটেছেন।কারণ তারা চায় ভারতবর্ষের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় তারা লেনিন,চে,মাও দের জীবনী তুলে ধরবে।ভারতবর্ষের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রান্ট পায় নাট্যদলগুলো।মাসে ১০০০০ টাকা বেতন পায় একজন নাট্যশিল্পী,একজন ডিরেক্টর মাসে ১৫০০০ টাকা বেতন পায়।এছাড়া ফেস্টিভ্যাল গ্রান্ট, প্রোডাকশন গ্রান্ট ইত্যাদিতেও লক্ষ লক্ষ টাকা।এবং যেসব নক্সাল ও মাওবাদী নাট্যব্যাক্তিত্বরা কেন্দ্র সরকারের এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা ওই লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।যবথব করে একটা ফেস্টিভ্যাল করে বাকি টাকা ঝেড়ে দেন।দলের সদস্যদের নামে মাসে যে ১০০০০ টাকা স্যালারী আসে তারা সেই টাকা সদস্যদের না দিয়ে নিজের বৌ ছেলে কে গাড়ী কিনে দেন।আর বাকি সময় নাটকের মাধ্যমে মার্ক্স,লেনিন করতে থাকেন।তা এহেন নক্সাল ও মাওবাদী নাট্যব্যাক্তিত্বদের বিকশিত ভারত সম্পর্কে মাত্র ২০ মিনিটের নাটক করতে একটু জ্বলবে বৈকি!!!ভারত বিরোধী প্রোপাগান্ডায় যারা অভ্যস্থ,দেশ বিরোধী মানসিকতায় যারা পুষ্ট,সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে যারা মদত দেয়, সেইসব নক্সাল ও মাওবাদী নাট্যজনেরা নিজেদের টাকায় করুন না,আমাদের দেশের টাকায় কেন???
সম্প্রতি আমাদের রাজ্যের মহান বুদ্ধিজীবি নাট্যকর্মী – থুড়ি – নাট্যশিল্পী তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু মহাশয় জানিয়েছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একটি সার্কুলার জারি করে জানিয়েছে যে প্রতিটি নাট্যদলকে বিজেপির জন্যে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারমূলক নাটক করতে হবে । না করলে সেই দলকে সমস্ত রকম সরকারী অনুদান থেকে বাদ পড়তে হবে । যেহেতু এই রাজ্যের নাট্যদলগুলি বামপন্থী সেকুলার তাই সকলকে একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন তিনি । এই সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলব ।
১. প্রথমতঃ, বিজেপির জন্য প্রচারমূলক নাটক করতে হবে-এই ধরনের কোনও প্রস্তাব এখনো কোনও দলের কাছে এসে পৌঁছয়নি তাই এখনই এর সত্যাসত্য বিচার করা সম্ভব নয় । যারা অনুদান পায়না আর যারা অনুদান পায় কেউই এখনো এরকম কোনও সার্কুলারের কথা জানেনা । উনি নিজেও কোনো সার্কুলার দেখাতে পারেননি শুধু কোথা থেকে একটা নাটক জোগাড় করে পোস্ট করেছেন ।যে নোটিফিকেশন দেওয়া হয়েছে সেটিতে স্পষ্ট কি লেখা আছে দেখুন।মাননীয় বামামূল মন্ত্রী মহাশয় এই মিথ্যাচারিতা কেন করছেন তা জানা নেই।
২. নির্বাচনে লড়বে বিজেপি শাসিত এন.ডি.এ জোট আর অনুদান দেয় কেন্দ্রীয় সরকার । ফলে একটি জোট দ্বারা পরিচালিত সরকার কীভাবে একটি নির্দিষ্ট দলের প্রচার না করলে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে এটা নিয়ে আলোচনার বিষয় থাকছে ।
৩. বিষয়ান্তরে বলা যায়, নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলই নাট্যকর্মীদের সাহায্যে প্রচারমূলক নাটক করে থাকে এটি কোনও অপরাধ নয় । এর জন্যে তারা শিল্পীদের পারিশ্রমিকও দিয়ে থাকে । বামেরা করে, তৃণমূল করে, বিজেপিও করে । করতেই পারে । এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, ২০১১ সালের নির্বাচনের পর একটি গোঁজামিল দেওয়া নাট্য সংগঠন তৈরি হয়েছিল যার নাম ছিল ‘নাট্যস্বজন’ যার ফান্ডের অনেকটার কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি আর অচিরেই সেটি বিলুপ্ত হয় । এই সংগঠন ১০০টি করে দলকে পরপর দু বছর যথাক্রমে ৩৫০০০ আর ৫০০০০ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেছিল – এই ক্ষেত্রে কোনও অ্যাপ্লিকেশনের ব্যাপার ছিল না । নিজেদের ইচ্ছেমতন ১০০টি দলকে পরপর দু বছর টাকা দেওয়া হয়েছিল । কে কোন খাতে সেই টাকা ব্যবহার করেছিল তার কোনও ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পর্যন্ত চাওয়া হয়নি কারো কাছে । ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই সংগঠনের আওতায় থাকা সমস্ত দলকে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে একটি প্রচারমূলক নাটক করার জন্য সিডি আর স্ক্রিপ্ট সব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল । সেই নাটক এমন একটি নাটক ছিল যেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়েও ঠাট্টা করা হয়েছিল কদর্য ভাবে । নির্বাচনের পর সেই সংগঠন লাটে ওঠে আর অনুদান প্রতিদান তখন নাট্য অ্যাকাডেমিতে এসে কেন্দ্রীভূত হয় – যেখানে এমন দলও অনুদান পায় যারা আবেদনই করে না, আবার বছরের পর বছর আবেদন করেও অনুদান বা নাট্যমেলায় সুযোগ – কিছুই পায়না অধিকাংশ দল । ও হ্যাঁ, সেই কদর্য নাটকটির নাটককার ছিলেন শ্রী দেবেশ চট্টোপাধ্যায় মহাশয় । বিরোধী রাজনীতি করা এক জিনিস আর কারো মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে রসিকতা করা আরেক জিনিস । রাহুল গান্ধীর আদলে বানানো কংগ্রেস নেতার সংলাপে “উড়ল যখন বাবার মাথা” কাদের বিনোদন যোগায় জানা নেই ।
৪. মাননীয় মন্ত্রী মহাশয় কীভাবে যেন বুঝে গেছেন এই রাজ্যের নাট্যদল মানেই বামপন্থী আর বামপন্থী মানেই সেকুলার । সেকুলার শব্দের অর্থ কি ? সেকুলার শব্দের অর্থ সমস্ত ধর্মকে সমান গুরুত্ব দেওয়া । সেকুলারের অর্থ কিন্তু ইমাম ভাতা নয়, সেকুলারের অর্থ কিন্তু শাহজাহান শেখ কিংবা খাগড়াগড় কিংবা মেটিয়াব্রুজ কাণ্ড নয়, সেকুলারের অর্থ কিন্তু পার্ক সার্কাসে রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন গেরুয়া পতাকা দেখে অবাধে গাড়ি ভাঙচুর মারপিট গুণ্ডামি নয়, সেকুলারের অর্থ কিন্তু সংখ্যালঘু মানুষদের উস্কানি দিয়ে ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা নয় ।
৫. মাননীয় মন্ত্রী মহাশয় বামপন্থার ডাক দিয়েছেন । ওনার কাছে বামপন্থা মানে বামবিরোধী সরকারের অংশীদার হওয়া, ওনার কাছে বামপন্থা মানে জার্সি বদলে ক্ষমতা ভোগ করা, ওনার কাছে বামপন্থা মানে শিক্ষিত বেকারদের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া, ওনার কাছে বামপন্থা মানে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ এক দশকের ওপর স্তব্ধ করে রাখা, ওনার কাছে বামপন্থা মানে চাকরির পরীক্ষা যেহেতু দুর্গাপুজো নয় তাই বছর বছর হওয়ার কোনও মানে নেই ।
৬. দিনের পর দিন বিপ্লবী বামপন্থী এক শ্রেণীর নাট্যকর্মীর দল সরকারের কাছ থেকে অনুদান পেয়ে সেই টাকার সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার করা, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া, বিভাজন সৃষ্টি করা, কুৎসা করা, দেশবিরোধী প্রচার চালানো, দর্শকদের অডিটোরিয়ামে ঢোকার রাস্তায় গীতা (বাইবেল, কোরআন, জেনাবেস্তা, গুরু গ্রন্থ সাহিব ইত্যাদি নয় – শুধু গীতা) ছড়িয়ে নিজেদের সেকুলার প্রমাণ করা, আজাদ কাশ্মীরের জিগির তোলার মতন কাজ করা সত্ত্বেও কিন্তু অনুদান পেয়ে এসেছে । এবার প্রশ্ন হল এই সমস্ত কর্মকাণ্ডগুলো কি বামপন্থা আর সেকুলারিজম এন্ডোর্স করে ? আর একটি ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার সব জেনেশুনেও তাদের অনুদান বন্ধ করে না ? কি অদ্ভুত তাই না ?
আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রান্ট কমিটির এই বছরের লিস্ট অনুযায়ী অনেক দলের ফেস্টিভ্যাল গ্রান্ট বাতিল হয়েছে । কেন হয়েছে কি কারণে হয়েছে সেটা সরকার জানে । সেটা জানার বা সেটা নিয়ে কিছু বলার মতন তথ্য বা এক্তিয়ার কোনোটাই আমার নেই। তাহলে কি ভাইদের কাছে প্রেস্টিজ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে মহামহিমের নাকি অনেকের সংসার খরচের টাকায় টান পড়ায় ভাতে মরার ভয় পাচ্ছে অনেকে ?
বামপন্থা আর সেকুলারিজমের আফিম খাইয়ে মানুষকে যা খুশি বোঝাবেন আর মানুষ সেটাই বুঝবে – মানুষকে কি ভাবেন বলুন তো আপনারা ?
তাহলে সরাসরি দুটো কথা বলছি সবাইকে ভাবানোর জন্যে । সরাসরি বলছি কোনো রাখঢাক রাখছি না । প্রথমতঃ, বিজেপি বা আর এস এস (যদিও আর এস এস কোনো রাজনৈতিক দল নয়) কেউ কোনো নাট্যদলের ওপর কোনো এম্বার্গো চাপায়নি বা চাপানোর ইচ্ছেও পোষণ করেনা । এটা বামেদের কাজ । তাই কিছু উলঙ্গ বাম আর ঘোমটা পরা বাম এই ধরনের কিছু মিথ্যে প্রচার করে চলেছে সোশাল মিডিয়ায় । আমাকে স্রেফ বিজেপি করার অপরাধে “সেকুলার বামপন্থী” নাট্যকর্মীরা নাটক থেকে বাদ দেওয়ার জিগির তুলেছিল । বিজেপি করার অপরাধে বহু শিল্পীকে ভাতে মারার প্ল্যান হয়েছে । তাও কিন্তু সেসব “সেকুলার বামপন্থী” বিপ্লবী শিল্পীকুল ভারত সরকারের কাছ থেকে ন্যূনতম বিরোধিতা ও অসম্মানের মুখোমুখি হয়নি । তাহলে বিচার হোক আসল “ফ্যাসিস্ট” কারা ? আর দুই, ভারত সরকার কোনো নাটক বন্ধ করেনি ও করার মানসিকতাও নেই তাদের । তবে কেন্দ্রের টাকায় দিনের পর দিন দেশবিরোধী সাম্প্রদায়িক জিগির তোলা নাটক আর উস্কানিমূলক নাটক করার তীব্র বিরোধিতা করছি । তারা নিজেদের চাঁদার টাকায় নাটক করুক ক্ষতি নেই কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশবিরোধী সাম্প্রদায়িক প্রোপাগান্ডা চলবে এটা হতে পারে না । তার জায়গায় সুযোগ পাক সেইসব দল যারা সত্যি নাটককে ভালোবেসে নাটক করে, কোনো প্রোপাগান্ডা করা যাদের উদ্দেশ্য নয় । এর জন্যে কেউ “নাট্যবন্ধু” বলুক বা “ফ্যাসিস্ট” বলুক – কি আসে যায় ? আপনি বামপন্থী, আপনি বিজেপি,আপনি তৃণমূল কোনোকিছুতেই ভারতবর্ষের কোনো আপত্তি নেই।এরকম প্রচুর বামপন্থী মানুষকে চিনি যারা ভারববর্ষের আত্মাকে অস্বীকার করেনা।এখন আপনি নক্সাল,মাওবাদী বা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করবেন নাটকের মাধ্যমে আর দেশের মানুষ তার ট্যাক্সের টাকা ঢেলে সাপ্লাই দেবে,তাতো হবেনা নটবর।
বাংলার মানুষ কিন্তু অত বোকা নয় । মন্ত্রীমশাই সেটাই ভুলে গিয়েছেন । আসলে চাপ । প্রবল মানসিক চাপ । ওনার ভাষাতেই কোট আনকোট বলি “ঠেলার নাম বাবাজি !”